Wednesday, October 18, 2023

যথার্থতার মানদণ্ডই বিবেক (Generally accepted common judgment ) বা সর্বজন গ্রাহ্য সাধারণ বিচার বোধ

 

বিবেক বা ন্যায্যতা নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শুনা যায় আমাদের সমাজে। রিকশাওয়ালাকে কম ভাড়[ দিলে বলে আপনি ন্যায্য ভাড়া দেন নাই বা আপনার কি বিবেক নাই? এই বিবেকটা আসলে কি তা নিয়ে আমার মতে বিভিন্ন মানুষের মনে বিভিন্ন রকম ধারণা রয়েছে যাকে সাধারণীকৃত করা হয় নাই। সবাই বিবেক বলতে একই জিনিসকে বুঝায় না তা জানা সত্যেও সবাই বিবেকের দোহাই দেয়। আমার মনে হয়েছে জনসাধারণ যে বিবেকের কথা বলে তাকে তারা সাধারণিকৃত (স্টেনডারডাইজইড) মানদণ্ড (স্কেল) ধরে নেয়। কিন্তু দিলখুশা থেকে সিদ্ধেশ্বরীর ভাড়া ৬০ টাকা নাকি ৮০ টাকা হবে তার ন্যায্যতা কোন মানদণ্ডে বিচার হওয়া উচিত? যখন অফিস ছুটির সময় তখন তারা ৮০ টাকা চাওয়াকে ন্যায্য মনে করে আর অন্য সময় ৬০ টাকা। বৃষ্টি হলে বা রাস্তায় প্রচুর যানজট হলে ১০০ টাকা দাবি করে, কাউকে আবার ১২০ টাকাও চাইতে শুনেছি। তাহলে এই যথার্থতার মানদণ্ডটা কি হওয়া উচিত? সরকার সিএনজি ট্যাক্সির মিটার রেট নির্ধারণ করে দিলেও তারা মিটার চালায়ে রাখে কিন্তু দামাদামি করে ভাড়া ঠিক করে নেয়। সরকারের বেধে দেয়া রেটকে তারা ন্যায্য মনে করে না বলেই তারা এই কাজটা করে থাকে। আমার কথা হলো ন্যায্যতা বা যথার্থতার একটা মাপকাঠি অবশ্যই আছে না হলে লোকজন বিবেক বিবেক বলে এত চেঁচায় কেন? বিশ্ব বিবেক বলেও একটা ধারনা আছে তা হলে বিবেক কি আর বিশ্ব বিবেকটাই বা কি? যারা সিভিক্স সায়েন্স কিংবা সমাজ বিদ্যা নিয়ে পড়াশুনা করেন তারা মনে হয় আমার কথা শুনে হাসছেন। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম তার পর নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে বাণিজ্য বিদ্যা দিয়ে পড়াশুনার শেষ করেছি। তাই আমার কাছে সমাজ বিদ্যা ডিগ্রিতে পাঠ্য হলেও যারা অনার্স কিংবা মাস্টার্স করেছেন তাদের তুলনায় আমার জ্ঞান কম থাকাটাই স্বাভাবিক। যে টুকু বুঝি তা হলো বিবেক বলতে সমাজের গণ মানুষের সম্মিলিত মনোভাবের স্বীকৃত মানদণ্ডকে বুঝান হয়। সহজ করে যদি বলি, ইংরেজিতে একটা মাত্র শব্দ দিয়ে যাকে বলা হয় কনসেনসাস, মানে হলো জনমত আর এই জনমতই মূলত বিবেকের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। 

আমার উপরের স্বব্যাখ্যাত সঞ্জাটি সত্য হলে অনেকে বিবেককে যে ঐশ্বরিক কিংবা অলৌকিক কিছু ভাবে তা সম্পূর্ণ রূপে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। যথার্থতার মানদণ্ড নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। দিলখুশা থেকে সিদ্ধেশ্বরীর রিকশা ভাড়া ৬০ টাকা যথার্থ নাকি ৮০ টাকা ঠিক, একজন ১২০ টাকা চাওয়াতে পাসের কিকশাওয়ালাই হেসে দিল। লোকজন বলে বসলো তুমি তো জায়গাটা না চিনেই আন্দাজে ভাড়া চাইছো। আমার কথা হলো এই ভাড়াটা যে ৮০ টাকা ঠিক হবে তা কে নির্ধারণ করে দিল আর ১২০ টাকা চাওয়াতে পাশের রিকশাওয়ালা কেন হাসলো ও তাকে অন্যায্য মনে করলো? রিকশায় তো সিএনজি ট্যাক্সির মত মিটার লাগানো নাই যে সরকার ঠিক করে দিয়েছে প্রতি কিলোমিটার এত টাকা। এই যে ৮০ টাকা ন্যায্য ভাড়া হবে এটা সকল রিকশাওয়ালা ও যাত্রীদের সামগ্রিক কনসেনসাস বা জনমত। এটা গড়ে উঠেছে দু পক্ষের দর কষাকষি বা ইংরেজিতে যাকে বলে বারগেইনিং পাওয়ারের উপর নির্ভর করে। তবে প্রত্যেক মানবের মনে একটা নৈতিকতার ধারনা আছে যা তার শিক্ষা, পরিবেশ, বড় হয়ে উঠার সময় তৈরি হয়, আর এটাও তৈরি হয় সেই কনসেনসাস বা জনমতের ভিত্তিতে। যদি তাই হয় তবে সামাজিক মানব মনের নৈতিকতার ধারণাই বিবেক যা সে যে সমাজে বসবাস করে তার সর্বগ্রাহ্য জনমতের প্রতিফলন মাত্র। মুক্ত বাজারে দ্রব্যমূল্যের উঠা নামা চাহিদা সরবরাহ নিতির উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় তেমনি রাস্তায় রিকশার সংখ্যা কমে গেলে তারাই হয়ে যায় মূল্য নির্ধারক বা প্রাইস সেটার আর বেশি রিক্সা থাকলে আরোহী প্রাইস সেটার মানে দর কষা কষি চলতে থাকে। কিন্তু সেটাও হয়ে ওই ন্যায্য ভাড়ার কতটা উপরে বা কতটা নিচে নামা হলো তা নিয়ে । আমার প্রশ্ন হলো ওই ন্যায্যতার মানটি কে নির্ধারণ করে দিয়েছে? সরকার তো রিক্সা ভাড়ার রেট ফিক্স করে দেয় না। কিংবা ধরুন চুল কাটার রেট বা জুতা পালিশের রেট এই সেবা গুলোর ন্যায্যতা কিভাবে নির্ধারিত হয়? পণ্যর দাম নির্ধারণের একটা পদ্ধতি আছে, কাঁচামাল এর দাম, কারখানা খরচ, শ্রমিকের মজুরী, পরিবহন খরচ, মজুত খরচ, অফিস খরচ ইত্যাদি মিটানোর পর একটা মার্জিন মার্ক আপ করে মিনিমাম রিটেল প্রাইস নির্ধারণ করা হয় কিন্তু সেবা সমূহের মূল্য কিসের ভিত্তেতে নির্ধারিত হয়?

যেহেতু বিষয়টি সমাজবিদ্যার তাই সমাজ সম্পর্কে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকতেই হবে। সমাজ কাকে বলে তা নিয়ে পুথি গত বিদ্যা অনেকেরই আছে কিন্তু আমি যখন লিখি তখন পাঠ্য পুস্তক থেকে নিয়ে লিখি না বরং আমি যা জানি বা আমার মনে আছে তার ভিত্তিতে লিখি। তাতে করে আমার মনের যুক্তির কাঠামোটা আমার কাছেই ধরা পরে আগে। আমার জানা বা জ্ঞান যতদূর যায় তাতে আমি জানি মুসলমানদের সমাজবিদ্যা শুরু হয় হাদিসে সাফিনা দিয়ে যেখানে বলা হয়েছে সমাজ হলো দ্বিতল নৌকার মত যেখানে উপরের তলার লোকেরা সুপেয় পানি পায় কিন্তু নিচের তলার লোকেরা পনির কাছে থাকলেও তারা তা পায় না আর উপর তলার লোকেরা যদি নিচের তলার লোকদের পানি না দেয় তবে তারা নৌকার তলা ফুটো করে পানি নিবে আর তাতে পুরো নৌকা তথা সমাজটাই ডুবে যাবে। মূলত মুসলিম সমাজ যেভাবে সমাজের ব্যাখ্যা দেয় তা হলো এক গুচ্ছ লোকজন যাদের মধ্যে আর্থিক ও অনআর্থিক লেনদেন এর একটা সমঝোতা হয় যা একটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংরক্ষিত হয় যাকে বলে অথারেটারিয়ান সিস্টেম। এই কর্তৃপক্ষ ভিত্তিক সমাজের নেতৃস্থানীয় অল্পসংখ্যক লোকজন যারা সমাজের মোড়ল বা মাথা হিসেবে কাজ করে। এ তো গেল মুসলমানদের কথা। পশ্চিমা সভ্যতায় মারগারেট থেচারের প্রদত্ত সঞ্জা অনুযায়ী এক দল লোক যারা তাদের ভাগ্য উন্নয়নের স্বার্থে একত্রে বসবাস করছে তাদের একটা সমাজ বলা যায়। আর সম্যবাদীদের চোখে সমাজ হলো একটা চাকার মতে যার স্পোকগুলো ব্যক্তি বিশেষ আর তাদের সম্মিলিত কাঠামোতে চাকাটা চলতে থাকে। তাদের কাছে সমাজ একটা শ্রমিক মালিক সম্পর্ক বা শোষিত আর শাসকের সম্মিলন একটা রূপ। এই তিন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের বিবেক ভিন্ন ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। মুসলমানরা দান দক্ষিণা কে পূণ্যময় কাজ মনে করবে, পশ্চিমা সভ্যতা স্বার্থপরতাকে ও ব্যক্তি কেন্দ্রিকতাকে যথার্থ জ্ঞান করবে আর সাম্যবাদিরা ধনি গরিব সবাইকে কেটে ছেঁটে এক সমান করতে চাইবে। তাই যদি হয় তবে মোটা দাগে বিশ্ব বিবেক বলে আসলে তিন রকমের বিবেককে আমরা দেখতে পাবো। রিক্সা ভাড়ার বিষয়ে ইসলাম তিন রকম বিবেকের কথা বলে, যে কোন চুক্তিতে যদি রিকশাওয়ালা বলে যা ভাড়া তাই দিয়েন তবে রিক্সা আরোহী গন্তব্যে পৌঁছে যা দিবে তাই রিকশাওয়ালাকে নিতে হবে। কিন্তু রিকশাওয়ালা যদি নির্দিষ্ট করে বলে এত দিতে হবে আর তাতে আপনি রাজি হন তবে তাই দিতে হবে। আর যদি আপনি একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পরে বলেন যে অমুক জায়গায় নিয়ে যাও যা ভাড়া তাই দিব তবে গন্তব্যে পৌঁছে রিকশাওয়ালা যা চাইবে তাই আপনাকে মানে রিক্সা আরোহীকে দিতে হবে। ইসলামে চুক্তির এই তিনটা নিয়ম খাটে। ইসলাম আরো বলে মার্জিন দিতে মানে যা ভাড়া তার চেয়ে দু এক টাকা বেশি দিয়ে দিতে। ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে। কিন্তু আপনি পশ্চিম বঙ্গে যান ওখানে সাম্যবাদ বা বস্তুবাদী জনমত ওখানে কোন রিকশাওয়ালাকে আপনি একটাকা বেশি দিলে পাশের লোকটা আপনাকে বলবে এই তো ওর চাহিদা বাড়িয়ে দিলেন আজ আপনার কাছ থেকে পেল কাল আমার কাছে চাইবে। পশ্চিমা বিশ্ব তাই রাস্তায় বিবেকের বিচারের কোন অবকাশ রাখে নাই ওখানে ট্যাক্সি ভাড়া কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত তাই প্রতিবার দামাদামির বা দর কষাকষির দরকার পরে না। কোন ট্যাক্সি কোন গন্তব্যে যাবে কি যাবে না তা জানারও প্রয়োজন পরে না। আপনি যেখানে যেতে চান সেখানে সেই ট্যাক্সি আপনাকে নিয়ে যেতে বাধ্য। তাই বলছিলাম সমাজ ভেদে বিবেক ভিন্ন ভিন্ন রকম সমাধান দেয়। উন্নত সভ্যতায় এই রকম বিভ্রান্তিকর শব্দকে ডিকশনারি বা অভিধান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে কিন্তু আমরা বাঙ্গালীরা বিদেশী শব্দ যত পারি অন্তস্থকরণ করে পুরাতন গুলোর বিভ্রান্তিকর বিষয়গুলো দুর করার বিষয় ভুলে বসে আছি। ভাষা নিয়ে ভাবে এরকম ভাষাবিদ কি কেউ আছে এখন আমাদের দেশে কিংবা বৃহত্তর বংগ দেশে? সবাই এখন বিদেশী টেকনিকাল টার্মগুলো বাংলা ভাষায় আত্তীকরণে ব্যস্ত।

বিবেক নিয়ে আমাদের সমাজে ভ্রান্ত ধারনা বিরাজমান রয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে তাও বহু বছর আগে থেকেই। বিবেক কোন ধ্রুব কিংবা স্থির বিষয় না, এটা সমাজ ভেদে ধর্ম ভেদে পরিবর্তিত হতে বাধ্য। লোকজন বিবেকের দোহাই দেয় বিবেক কাকে বলে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা না থাকা সত্যেও। কারণ সে ওই ব্যক্তির নৈতিক ভিত্তির কাছে আবেদন করে আর ভাবে যে তার নৈতিক ভিত্তি আর ওই লোকের নৈতিক ভিত্তি একই হবে। কিন্তু এটা এক নাও হতে পারে, কারণ আগেই বলেছি ব্যক্তি বিশেষের সমাজ, ধর্ম, বড় হওয়ার পরিবেশ ইত্যাদি নানা বিধ উপাদানের সামষ্টিক প্রতিফলন ঘটে তার নৈতিক ভিত্তি তথা বিবেকের উপর যা ব্যক্তি পার্থক্যে ভিন্ন হতে বাধ্য। সাধারণ জনগণ মনে করে সবার বিবেক একই কিন্তু এই ধারণাটি পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা। সবার বিবেক এক হওয়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার, একই সমাজে তা অনেক কাছাকাছি হবে কিন্তু কখনই একই হবে না। একটা সমাজের বিবেককে কাছাকাছি আনতে ও প্রায় একই করতে সাহিত্যের ভূমিকা অনেক যা বিজ্ঞান মনষ্ক লোকজন আজ ভুলতে বসেছে। ধর্ম ভিত্তিক যে নিতিবোধ বা নৈতিকতা তা আরোপিত নৈতিকতা আর তাই সমাজে যখন তা প্রযুক্ত হয় তখন তাতে নানা স্খলন দেখা যায়। যেমন একজন পাচওয়াক্ত নামাজী ঘুষের টাকা নিয়ে ধর্মের নিতিবোধের যুক্তি দেয় যে ঘুষের টাকায় কাজ হয়ে যাবে না হলে তাকে তার স্রষ্টার কাছে শেষ বিচার দিবসে জবাবদিহি করতে হবে। ধর্মে রাস্তায় পড়ে থাকা একটা ময়লা বা কলার ছাল সরায়ে তা পরিষ্কার করার বিষয়ে বলা থাকলেও লোকজনকে তা তেমন একটা করতে দেখা যায় না। তাই ধর্মীয় নীতিবোধ সমাজে প্রভাব ফেললেও তার চাইতে বেশি প্রভাব ফেলে সেই সমাজের মোড়ল শ্রেণী ও ওই সমাজের লোকজনদের মানসিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ডের সমঝোতা এক কথায় ইংরেজিতে যাকে বলে কনসেনসাস। ধর্মীয় নীতিবোধই যদি কনসেনসাস বা বিবেক গঠন করতো তা হলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন দেশের অর্থনীতি সুদ ভিত্তিক হওয়া সম্ভবই ছিল না কিন্তু তা হয়েছে আমাদের দেশ সহ বহু দেশেই।

বিবেক সম্পর্কে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চেট জেপিটিকে প্রশ্ন করায় সে বিভ্রান্তিকর উত্তর দিল যেটা ঘষা মাজা করে যা পেলাম তা এরকম ["বিবেক" শব্দটি একটি বাংলা শব্দ, এবং এটি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, নির্ভর করে সন্দর্ভে এবং বাক্যের সম্পর্কে। কিছু সাধারণ বাংলা অর্থ সম্পর্কে "বিবেক" শব্দটি ব্যবহৃত হয় জ্ঞান এবং কিছু ব্যাপারের সঠিকতা বুঝতে সহযোগিতা করে। সচেতনা এবং মেধা অর্থে "বিবেক" প্রকৃত সচেতনা, মেধা, এবং তা বুঝে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতা অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। নীতি এবং নীতিনির্ধারণ ক্ষেত্রে "বিবেক" শব্দটি এমন একটি ধারণা দেয় যা প্রাথমিক বিচার এবং নীতি নির্ধারণে ব্যবহৃত হতে পারে। সূচনা করা অর্থে "বিবেক" শব্দটি সাধারণভাবে কোনও বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কে বুঝানো বা সূচনা করা মাধ্যমে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে, "বিবেক" শব্দটি সামাজিক নীতি, নীতি নির্ধারণ, অথবা আদেশের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, সাধারণভাবে সরকার বা সংগঠনের অধিকারপ্রাপ্ত নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত হতে পারে। এই শব্দটির অর্থ এবং ব্যবহার সাম্প্রতিক সন্দর্ভ এবং বাক্যের সম্পর্কে ব্যবহারের সম্পূর্ণ ভাব স্পষ্ট করতে ব্যক্তিগত বা সূত্রসূচক হতে পারে। ]

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে বিবেক সম্পর্কে যা পেলাম তা এরকম [“বিবেক একটি জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া যা কোনও ব্যক্তির নৈতিক দর্শন বা মান পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে আবেগ এবং যুক্তিযুক্ত অনুষঙ্গ প্রকাশ করে। সহানুভূতিশীল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাৎক্ষণিক সংজ্ঞাবহ ধারণাগুলি এবং প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিক্রিয়াগুলির উপর ভিত্তি করে বিবেক আবেগ বা চিন্তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণ পরিভাষায়, যখন কোনও ব্যক্তি এমন একটি কাজ করে যা তাদের নৈতিক মূল্যবোধের সাথে দ্বন্দ্ব ঘটায়, তখন বিবেক প্রায়শই অনুশোচনার অনুভূতির দিকে পরিচালিত করে বলে বলা হয়। মনোবিজ্ঞানের অনুশীলন এবং অধ্যয়ন উভয়ক্ষেত্রেই সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতা পরীক্ষায়, একজন ব্যক্তির নৈতিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক দর্শনের পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার সাথে তাদের অনৈক্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। বিবেক কোন কাজের আগে নৈতিক বিচারকে কতটা অবহিত করে এবং এই ধরনের নৈতিক বিচার যুক্তির উপর ভিত্তি করে হয় বা হওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে মধ্যযুগের শেষের পর ও আধুনিক ইতিহাসের বিভিন্ন সময় বিতর্কের জন্ম হয়েছে।]

এই সব উত্তর থেকেই বুঝা যায় বিবেক নিয়ে কেন নানা রকম ভ্রান্ত ধারণা বিরাজ করছে আমাদের সমাজে। বিবেককে একেক জন একেক ভাবে উপস্থাপন ও ব্যবহার করে আসছে যার ফলে মানুষে মানুষে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। বিবেক কে যে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো হলো ন্যায়পরায়ণতা, নীতি, ধর্মবুদ্ধি, সাধুতা, চৈতন্য, বিচার, ফয়সালা, সিদ্ধান্ত, বিচক্ষণতা, বিবেচনা, বিচারবুদ্ধি, ইত্যাদি। প্রকৃত পক্ষে এর একমাত্র গ্রহণযোগ্য অর্থই হলো একটি সমাজের সর্বসম্মত জনমত যাকে ইংরেজিতে একটি শব্দে বলা হয় কনসেনসাস। গুগল ট্রেন্সেলেটরও বিবেকের ইংরেজি করলো conscience যার মানে ওই কনসেনসাস। আর এটাই মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক দর্শনের পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি মৌলিক ধারণা। তাই বলছিলাম মানুষজনকে এতটা বিভ্রান্তিকর শব্দ ব্যবহার করতে না বলে শুধু বলেন এ বিষয়ে আপনার বিচার কি বলে বা বিবেক কি বলে? তাই আমার লেখাটির শিরোনাম যথার্থতার মানদণ্ডই বিবেক বলাটা সঠিক ও এক কথায় প্রকাশ বলে আমি মনে করি। নিচের ছবিটা দেখুন, বুঝবেন কনসেনসাস কি জিনিস, সবাই এক বাক্যে বলবেন এটা অনেয্য, তার জন্য কাউকে বিতর্ক করতে হবে না। এটাকেই আমি বলেছি Generally accepted common judgment বা সর্বজন গ্রাহ্য সাধারণ বিচার বোধ।


অনেকে আমার লেখাকে ভালো বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন আপনার ধৈর্য আছে দেখে লিখতে পারেন, আবার বলেছেন খুব খাটা খাটনি করেন বুঝা যায়। লেখায় গভীরতা আছে। আসলে আমি তো তেমন খাটা খাটনি করি না তবে পাঠকের পরামরর্শ ও মতামত শুনে লেখার মধ্যে তার প্রতিফলনের চেষ্টা করি। আমার লেখা ভাল বলার কারণটা মনে হয় আমি ধরতে পেরেছি। আমি মূলত আমার চিন্তা ভাবনা গুলো বিষয়ভিত্তিক ভাবে লেখায় তুলে আনি, তাই যখন পাঠক তা পড়েন তখন তার নিজের ওই বিষয়ে যে পূর্ব ধারণা বা প্রি-কনসেপশন আছে তার সাথে আমার লিখিত চিন্তার একটা মিথস্ক্রিয়া (ডায়ালেকটিক্স) চলে আর এর ফলশ্রুতিতে পাঠক একটা পর্যায়ে তার মনের আভ্যন্তরীণ নানা  গ্রহণ বর্জন করে একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে সক্ষম হন। এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আনন্দই তাকে লেখাটাকে ভাল বলার জন্য যুক্তি প্রদান করে। সে যাই হোক, কেউ আমার চিন্তাগুলো পড়ে তাকে ভাল বললে আমার ভালো লাগে আর খারাপ বলে যদি যুক্তি দিয়ে তা তুলে ধরে বা আমাকে বুঝায়ে দেয় তা হলে আমি উপক্রিত হই। বিষয়টা তাই লেখক পাঠক উভয়ের জন্যই ফলপ্রসূ। আর তখন তা পরিচ্ছন্ন না করে উপায় থাকে না। তাতে চিন্তার গাঁথুনিও মজবুত হওয়া লাগে। যারা পড়ে তারা উপক্রিত হয় কিনা জানি না কিন্তু আমার চিন্তার স্বচ্ছতা আরো স্পষ্ট হয়। তাই আমার লেখা পড়া মানে আমার মনোজগতে আপনাকে স্বাগতম।

এডিট ও আপডেট হিস্ট্রিঃ ১৪অক্টোবর২০২৩> ১৬অক্টোবর২০২৩> ১৯অক্টোবর২০২৩> ২৪নভেম্বর২০২৩>

 

No comments:

Post a Comment